ইসলামী ঐক্য আন্দোলন । নবুওয়াতি ধারার খেলাফতি আন্দোলন।

রমজানের বার্তা

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজ, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুল হক মুরাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাঈল ফারুক আগত মাহে রমজান উপলক্ষে সম্মিলিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী সহ সকল মুসলিম উম্মাহকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন,
.
প্রতি বছর মাহে রমজান আমাদের জীবনে রহমত মাগফিরাত ও নাজাত নিয়ে আগমন করে। শারিরিক ও মানসিক শুদ্ধতা অর্জনের এক উপলক্ষ হয়ে আগমন করে। তাকওয়ার শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ প্রদান করে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও রমজান এসেছে তার মহিমা নিয়ে। কিন্তু এবারের রমজানের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। এটি এমন একটি সময়, যখন আল্লাহর ঘর মসজিদ তালাবদ্ধ, মানুষ গৃহবন্ধি। দিনমজুর ,শ্রমজীবী সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কর্মহীন। আসন্ন দিনের চিন্তায় মানুষ উদ্বিগ্ন। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করার এই মুহূর্তে রমজানের আগমন যেন তপ্ত মরুর বুকে রহমতের বারিধারা। আমরা অনেকেই হয়ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় অপেক্ষারত। আর্থিক সংকটের চিন্তায় চিন্তিত। কিন্তু এবারের রমজান আমাদের সামনে এক বিশেষ সুযোগ নিয়ে এসেছে। জাগতিক লৌকিকতাকে বর্জন করে এক আল্লাহর সন্তুষ্টিতে আত্মনিমগ্ন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রতিবছর রমজানের সময় লক্ষ্য করা যায়, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান আর আয়োজনে অযথা সময় নষ্ট করার দরুন রমজানের প্রকৃত কর্মকান্ড থেকে আমরা বিচ্যুত হয়ে পরি। রমজানের শুরুর দিকে উৎসব মুখর পরিবেশের সূচনা, মধ্যভাগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা আর শেষ ভাগে ঈদের কেনাকাটার মধ্য দিয়েই অনেকের রমজান অতিবাহিত হয়। কিন্তু এবারের রমজানে সেসবের বালাই না থাকায় এবারের রমজান হতে পারে প্রকৃত পক্ষেই আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনের সুযোগ।

এবারের রমজান একই ভাবে আরো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দ্বিতীয় হিজরিতে প্রথমবারের মত যখন মুসলিমদের উপর আল্লাহ রমজানের রোজাকে ফরজ করেছিলেন। সেসময় মক্কা থেকে সদ্য হিজরত করে আসা মুহাজির মুসলিমদের দৈন্য দশার পাশাপাশি মদিনার দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের (আওস-খাজরার যুদ্ধ) অবসান পরবর্তী মদিনার আনসার মুসলিমদের অর্থনৈতিক বেহাল দশা। সেই চরম দুর্দশাপূর্ন পরিস্থিতির মধ্যে রমজানের রোজাকে ফরয করা হয় আল্লাহর রহমত স্বরূপ। আর এই রমজানেই মুসলিমরা মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মত যুদ্ধের ময়দানে (বদরের যুদ্ধে) অবতীর্ন হয়। এই কঠিন ঈমানি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছিল (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)। আমাদের এই পরিস্থিতিকে কোনভাবেই সেই পরিস্থিতির সমতুল্য গণ্য করা যাবে না। সে পরিস্থিতি ও ঈমানি পরীক্ষার তুলনায় আমাদের এই অবস্থা কিছুই নয়। কিন্তু আমরা একই ভাবে ধৈর্য্য ধারণ করে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সমর্পন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। এবারের পরিস্থিতি যেন সেই সুযোগকে শতগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে।


যেহেতু এই মাস সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাস। আমাদেরকে এ কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, দীর্ঘস্থায়ী লক ডাউনের কারণে অনেক মানুষ আয়-‌উপার্জনহীন অবস্থায় জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়ে ঘরে বসে বসে দিনাতিপাত করছে। হয়তো অনেকের শেষ সম্বল টুকু নিঃশ্বেসিত প্রায়। যে সব ভাইয়েরা দিন এনে দিনে খায় কিংবা স্বল্প আয়ে কোনভাবে জীবন যাপন করে, তাদের দুঃখ–দুর্দশায় আমাদের সবাইকে শরিক হতে হবে। "যে ব্যক্তি পেট ভরে খায়, আর তার প্রতিবেশী উপোস থাকে, সে মুসলমান নয়" রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই অমোঘ বাণীর কথা মনে রেখে প্রত্যেকেই যার যার প্রতিবেশীর খবর নেই এবং একে অপরের পাশে দাঁড়াই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দিন! আমিন!
Share:
Education/hot-posts

Blogroll

BTemplates.com